বছরব্যাপী কর্মসূচি চূড়ান্ত করেছে বিএনপি
- আপডেট সময় : ০৪:০৮:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ৩২২ বার পড়া হয়েছে
মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিএনপি। এ উপলক্ষে র্যালি, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননাসহ বছরব্যাপী সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে দলটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নানা অপবাদ মোকাবিলা এবং বিএনপিকে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হিসাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে নতুন করে তুলে ধরা সর্বোপরি জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোই এসব কর্মসূচির লক্ষ্য। এরই মধ্যে বছরব্যাপী কর্মসূচির খসড়া চূড়ান্ত করেছে দলটির পক্ষ থেকে গঠিত সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি। ১ মার্চ রাজধানীর একটি হোটেলে আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মসূচি উদ্বোধন করা হবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, বছরব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যালি, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ডকুমেন্টারি, ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী, চিত্রনাট্য ও পথনাটক প্রদর্শনী। এর মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া সরকারের সফলতা, তাদের দর্শন এবং তারেক রহমানকে হাইলাইটস করা হবে। দলটির ঘোষিত ভিশন ২০৩০ কে হাইলাইটস করতে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করা হবে। এক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
ডিসেম্বরে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে আহ্বায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামকে সদস্য সচিব করে ১৩৫ সদস্যের ‘সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটি’ গঠন করা হয়। বিভাগীয়, বিষয়ভিত্তিক ও পেশাজীবী কমিটিও করা হয়। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, ইউরোপ, যুক্তরাজ্যসহ ৫টি ‘বহির্বিশ্ব কমিটি’ করেছে দলটি। কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি এসব কমিটি ইতোমধ্যে অন্তত ৭০টির ওপর বৈঠক করেছে। সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমরা ১৮টি বিষয়ভিত্তিক কমিটি করেছি। বিভাগীয় কমিটি করেছি ১০টি। বছরব্যাপী অনুষ্ঠানে মৌলিক প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে-র্যালি, সমাবেশ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, রচনা প্রযোগিতা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধের বই প্রদর্শনী। বহির্বিশ্বের সংগঠনগুলোও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে। এজন্য মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ ৫টি কমিটি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বিভাগ, জেলা-উপজেলা, থানা-ইউনিয়নে পালন হবে। আবার বিভাগীয় পর্যায় থেকেও আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করা হবে। বছরব্যাপী এসব কর্মসূচি শুরু হবে ১ মার্চ।
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর বীর-উত্তম বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেয়া হবে। এছাড়া শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান জিয়ারত করা, যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শন করা ও স্থানীয় জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোসহ আরও বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে।
প্রচার কমিটির সদস্য সচিব বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো ১ মার্চের আগেই সারা দেশে পাঠানো হবে।
সূত্র জানায়, বছরব্যাপী অনুষ্ঠান ১ মার্চ উদ্বোধনের পর ২, ৩, ৭, ২৬ ও ২৭ মার্চও রয়েছে কর্মসূচি। এ উপলক্ষে পোস্টার ও স্মরণিকার কাজও প্রায় শেষ। পোস্টারে জিয়াউর রহমানের ছবি বড় আকারে দিয়ে ‘তুমি স্বাধীনতা, তুমিই বাংলাদেশ’ শিরোনাম করা হয়েছে। এ পোস্টার কয়েকদিনের মধ্যেই সারা দেশে পাঠানো শুরু হবে। আগামী সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বছরব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণাসহ বিস্তারিত তুলে ধরবে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটি।
মিডিয়া কমিটির সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এমনভাবে উদযাপন করতে চাই, যাতে নতুন প্রজন্ম বুঝতে পারে যে, বিএনপিই প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল।
সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ আজ : সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর-উত্তম’ খেতাব বাতিলের উদ্যোগের প্রতিবাদে আজ ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলা সদরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করবে বিএনপি। বরিশাল বিভাগ বাদে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১০টায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এছাড়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে দাবিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশ বৃহস্পতিবার (আগামীকাল) বরিশাল মহানগরে অনুষ্ঠিত হবে।
দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা এখন গভীর খাদের কিনারায় মন্তব্য করে রিজভী বলেন, অবৈধ ক্ষমতাসীনদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অত্যন্ত নিপুণ হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে ‘নির্বাচন ও সুষ্ঠু ভোটের শত্রু’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার ‘খয়ের খাঁ’ কতিপয় নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, যিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে রয়েছেন, তিনি বিবেক যন্ত্রণায় ভুগতে ভুগতে এখন পদত্যাগের কথা বলেছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা এখন গভীর খাদের কিনারে।
ঠাকুরগাঁও সদর, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, নরসিংদী সদর ও মাধবদী, ফরিদপুরের নগরকান্দা, রাজশাহীর নওহাট্টা ও তাহেরপুর পৌরসভার নির্বাচনে ‘ভোট কারচুপি’ ও ‘ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, চতুর্থ দফায় পৌরসভা নির্বাচনে আগের ধাপের নির্বাচনগুলোর মতোই ছিল আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দখলে; সব ভোটকেন্দ্রেই তাদের দৌরাত্ম্য ছিল আগের মতোই ব্যাপক নজিরবিহীন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন প্রমুখ।