ঢাকা ০৯:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুর ৪০ দিন পর কি কোরআন খতম করতে হয়?

জনপ্রিয় অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০২:২৫:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ মার্চ ২০২১ ৬৮৭ বার পড়া হয়েছে

প্রশ্ন : আমাদের দেশে প্রচলন রয়েছে, কেউ মারা গেলে তিন দিন বা চল্লিশ দিন পর কোরআন খতম করানো হয়। এ ব্যাপারে ইসলামের বক্তব্য কী- একটু জানাবেন।

উত্তর : মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সাওয়াব করা একটি সুন্নত কাজ। নবী (সা.) মৃতের দাফন সম্পন্ন করে অবসর গ্রহণকালে কবরের নিকট দাঁড়িয়ে উপস্থিত সবাইকে লক্ষ্য করে বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য (আল্লাহ তাআলার নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা করো ও দোয়া করো, যেন তাকে এখন (প্রশ্নোত্তরে) ঈমানের উপর সুদৃঢ় থাকার শক্তি-সামর্থ্য দেন। কেননা এখনই তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩২২১)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, দাফন শেষে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা এবং তার অবিচলতার জন্য আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করা শরয়ি নিয়ম; বিদআত নয়। আর জীবিত ব্যক্তির দোয়া মৃত ব্যক্তিদের উপকার দেয়।

তাছাড়া মৃতদের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করাও ইসলামি শরিয়তে একটি স্বীকৃত বিধান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে- ‘হে আমাদের রব, আমাদের ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে— তাদের ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ১০)

নুহ (আ.) বলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ২৮)

ইবরাহিম (আ.) বলেন, ‘হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদের ক্ষমা করে দিবেন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪১)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মুমিন নারী-পুরুষদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও নিবাস সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত : ১৯)

শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ উছাইমীন (রহ.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, চল্লিশ দিনের মাথায় মৃতের জন্য কোরআন খতম করার হুকুম কী?
এটি মানুষের বানানো একটি বিদআত আমল। মৃত্যের চল্লিশ দিন হয়ে গেলে তার বাড়িতে আয়োজন করে যেখানে কোরআন খতম করা হয়— সেটি মূলত নিষিদ্ধ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি।

তাই ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বিনিময় দিয়ে কুরআন খতম করালে বিনিময় দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের গুনাহ হবে। এবং এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির কোনো সওয়াব হবে না

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মৃত্যুর ৪০ দিন পর কি কোরআন খতম করতে হয়?

আপডেট সময় : ০২:২৫:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ মার্চ ২০২১

প্রশ্ন : আমাদের দেশে প্রচলন রয়েছে, কেউ মারা গেলে তিন দিন বা চল্লিশ দিন পর কোরআন খতম করানো হয়। এ ব্যাপারে ইসলামের বক্তব্য কী- একটু জানাবেন।

উত্তর : মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সাওয়াব করা একটি সুন্নত কাজ। নবী (সা.) মৃতের দাফন সম্পন্ন করে অবসর গ্রহণকালে কবরের নিকট দাঁড়িয়ে উপস্থিত সবাইকে লক্ষ্য করে বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য (আল্লাহ তাআলার নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা করো ও দোয়া করো, যেন তাকে এখন (প্রশ্নোত্তরে) ঈমানের উপর সুদৃঢ় থাকার শক্তি-সামর্থ্য দেন। কেননা এখনই তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩২২১)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, দাফন শেষে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা এবং তার অবিচলতার জন্য আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করা শরয়ি নিয়ম; বিদআত নয়। আর জীবিত ব্যক্তির দোয়া মৃত ব্যক্তিদের উপকার দেয়।

তাছাড়া মৃতদের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করাও ইসলামি শরিয়তে একটি স্বীকৃত বিধান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে- ‘হে আমাদের রব, আমাদের ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে— তাদের ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ১০)

নুহ (আ.) বলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ২৮)

ইবরাহিম (আ.) বলেন, ‘হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদের ক্ষমা করে দিবেন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪১)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মুমিন নারী-পুরুষদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও নিবাস সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত : ১৯)

শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ উছাইমীন (রহ.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, চল্লিশ দিনের মাথায় মৃতের জন্য কোরআন খতম করার হুকুম কী?
এটি মানুষের বানানো একটি বিদআত আমল। মৃত্যের চল্লিশ দিন হয়ে গেলে তার বাড়িতে আয়োজন করে যেখানে কোরআন খতম করা হয়— সেটি মূলত নিষিদ্ধ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি।

তাই ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বিনিময় দিয়ে কুরআন খতম করালে বিনিময় দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের গুনাহ হবে। এবং এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির কোনো সওয়াব হবে না

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব