স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না: রাষ্ট্রপতি
- আপডেট সময় : ০৫:৪৯:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ মার্চ ২০২১ ৭৫৫ বার পড়া হয়েছে
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালনের কথা মনে করিয়ে দিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আজকের দিনটি বাংলাদেশিদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের, গর্বের ও সম্মানের উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭১ সালে মার্চের এই দিনের প্রথম প্রহরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই স্বাধীনতা হঠাৎ করে আসেনি।
শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’ থিমে শুক্রবারের আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অংশ নেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে ১৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে। শুক্রবার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে তা শেষ হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন ও সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি। একইসঙ্গে দেশটির সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর মর্যাদাপূর্ণ নিষ্পত্তিরও আশা করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধু অনুসৃত ‘কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’র নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কূটনৈতিক অঙ্গনে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর ও সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ভারতের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করে নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমানবতার ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। আমি আশা করি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানেও ভারতসহ বিশ্ব সম্প্রদায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য পাওয়া আবদুল হামিদ দেশের নাগরিকদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। স্বাধীনতা মানুষের অধিকার। অধিকারকে অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে ওঠে। আবার অধিকারের অপপ্রয়োগ স্বাধীনতাকে খর্ব করে। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না।
তিনি বলেন, অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাই স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সকলকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না রাখতে আয়োজকদের আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জানা ও বোঝার জন্য জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর জীবনকর্ম এবং তার নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাভাষা ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন ভাষায়ও যাতে বঙ্গবন্ধুকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যথাযথভাবে তুলে ধরা যায় সে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে গবেষক, ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।