ঢাকা ০১:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

জাগ্রত হও একুশের শুদ্ধতায়

জনপ্রিয় অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ৮১২ বার পড়া হয়েছে

পলাশ-শিমুলের চেয়েও আজ বেশি রক্তলাল শহীদ বেদি। কৃষ্ণচূড়ায় রক্তের লাল আজ আরও গাঢ়। সূর্যও লালে লাল। রক্তমাখা বর্ণমালায় অর্ঘ্য দিতেই এত আয়োজন। মায়ের ভাষা রক্ষায় যারা রক্ত ঢেলেছিলেন, জাতি আজ তাদের শ্রদ্ধা জানাতেই সাজিয়েছে ফুলের ডালা।

একুশ মানে রক্তস্নাত ভোরের সূর্য। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ মানেই বাংলা জয়ের প্রথম প্রহর। মা-মাটি-মানুষের আবেগের জাগরণ। জাগ্রত হও একুশের শুদ্ধতায়।

মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ। যেন অধিকার আদায়ে বাঙালির জীবনে প্রথম সূর্যোদয় এদিন। রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার দিন ২১ ফেব্রুয়ারি।

একুশের প্রথম প্রহরেই ফুলে ফুলে ভরে উঠছে দেশের শহীদ মিনারগুলোর বেদি। দিনব্যাপী ফুল দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, জব্বারদের। শহীদ দিবসে শোককে শক্তিতে রূপ দিয়ে বাঙালি তার দেশমাতৃকার চেতনা-দীপ্ত শপথ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন।

ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে কোনোই কার্পণ্য থাকে না দেশবাসীর। দল-মত, জাতি-ধর্ম, আবাল-বৃদ্ধা নির্বিশেষে সবাই ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে অধীর আগ্রহে থাকেন এদিন। নগ্নপায়ে ফুলের ডালায় হাত রেখে গাইবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রবাসী বাঙালিরাও। বিশেষ মর্যাদায় দিবসটি পালন করবে বিশ্ববাসীও। কোনো দিবসে শহীদদের প্রতি এভাবে শ্রদ্ধা জানানোর ঘটনা অন্য কোনো জাতিতে মেলে না।

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি ওঠে দেশভাগের পরপরই। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হলেও ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে আন্দোলনে রূপ নেয়, যা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চরম প্রকাশ ঘটে।

ওই দিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হোস্টেলে সমবেত হয়। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা ঢামেক হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশ নেয়।

ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতের মধ্যেই হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়।

২১ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়, যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে এবং ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

জাগ্রত হও একুশের শুদ্ধতায়

আপডেট সময় : ০৪:৫৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১

পলাশ-শিমুলের চেয়েও আজ বেশি রক্তলাল শহীদ বেদি। কৃষ্ণচূড়ায় রক্তের লাল আজ আরও গাঢ়। সূর্যও লালে লাল। রক্তমাখা বর্ণমালায় অর্ঘ্য দিতেই এত আয়োজন। মায়ের ভাষা রক্ষায় যারা রক্ত ঢেলেছিলেন, জাতি আজ তাদের শ্রদ্ধা জানাতেই সাজিয়েছে ফুলের ডালা।

একুশ মানে রক্তস্নাত ভোরের সূর্য। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ মানেই বাংলা জয়ের প্রথম প্রহর। মা-মাটি-মানুষের আবেগের জাগরণ। জাগ্রত হও একুশের শুদ্ধতায়।

মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ। যেন অধিকার আদায়ে বাঙালির জীবনে প্রথম সূর্যোদয় এদিন। রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার দিন ২১ ফেব্রুয়ারি।

একুশের প্রথম প্রহরেই ফুলে ফুলে ভরে উঠছে দেশের শহীদ মিনারগুলোর বেদি। দিনব্যাপী ফুল দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, জব্বারদের। শহীদ দিবসে শোককে শক্তিতে রূপ দিয়ে বাঙালি তার দেশমাতৃকার চেতনা-দীপ্ত শপথ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন।

ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে কোনোই কার্পণ্য থাকে না দেশবাসীর। দল-মত, জাতি-ধর্ম, আবাল-বৃদ্ধা নির্বিশেষে সবাই ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে অধীর আগ্রহে থাকেন এদিন। নগ্নপায়ে ফুলের ডালায় হাত রেখে গাইবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রবাসী বাঙালিরাও। বিশেষ মর্যাদায় দিবসটি পালন করবে বিশ্ববাসীও। কোনো দিবসে শহীদদের প্রতি এভাবে শ্রদ্ধা জানানোর ঘটনা অন্য কোনো জাতিতে মেলে না।

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি ওঠে দেশভাগের পরপরই। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হলেও ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে আন্দোলনে রূপ নেয়, যা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চরম প্রকাশ ঘটে।

ওই দিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হোস্টেলে সমবেত হয়। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা ঢামেক হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশ নেয়।

ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতের মধ্যেই হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়।

২১ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়, যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে এবং ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে।