ঢাকা ১০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
স্পেনে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস উদযাপন মহিলা সমিতি বার্সেলোনার পহেলা বৈশাখ উদযাপন বাংলাদেশ কোলতোরাল এসোসিয়েশন এন কাতালোনিয়ার ৯ সদস্য বিশিষ্ট সমন্বয় কমিটি গঠন টেনেরিফে ঈদুল ফিতর উদযাপন ও ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠিত শান্তাকলমায় শরীয়তপুর জেলা সমিতির ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত নোয়াখালী এসোসিয়েশনের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন বার্সেলোনায় গোলাপগঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের ইফতার সম্পন্ন বিয়ানীবাজার পৌরসভা ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট বার্সেলোনার ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত বার্সেলোনায় বিয়ানীবাজার ইয়াং স্টারের ইফতার সম্পন্ন বার্সেলোনা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তাফসীরুল কুরআন ও ইফতার মাহফিল অনুষ্টিত

খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে সিলেট

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:২২:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২ ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে

টানা চার দিন বৃষ্টির পর রোদের দেখা মিলেছে সিলেটে। শনিবার সকাল থেকে আর বৃষ্টি হয়নি সিলেটে। বৃষ্টি থামায় কমতে শুরু করেছে নদ নদীর পানিও। শনিবার সিলেটের সবগুলো নদীরই পানি কমেছে। পানি কমছে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকেও। তবে এখনো নগরের বাইরের বেশিরভাগ এলাকা জলমগ্ন হয়ে আছে। প্রায় ১৭দিন ধরে পানিবন্দি থাকা মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার, কানাইঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসীদ পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ২ সেন্টিমিটার কমেছে। কমেছে, লোভা, সারি ও ধলাই নদীর পানিও।

অনেকদিন পর রোদ উঠায় বাসা পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন নগরের তেররতন এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল আলী। তিনি বলেন, ঘরের ভেতরে প্রায় আট দিন পানি ছিল। ছয় দিন আগে পানি নামলেও বৃষ্টির কারণে ধোয়ামোছা করতে পারিনি। আজ থেকে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছি। পানি নামার পর এখন ঘরের ভেতরসহ আশপাশে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে ঘরেও থাকা যাচ্ছে না।

দোকান থেকে পানি নামলেও এখনো সড়ক তলিয়ে আছে জানিয়ে দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডের ব্যবসায়ী মুকুল আহমদ বলেন, আজ ১৭ দিন হলো পানিবন্দি হয়ে আছি। ব্যবসাপাতি সব চুলোয় গেছে। এভাবে আর কতদিন থাকতে হবে কে জানে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন ছড়া, খালের ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্ন করছে। যেদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা দল সেদিকে গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। পুরো নগরী ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করা হবে বলে জানান তিনি।

পানি ধীরে কমছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, পানি নামার গতি খুবই ধীর। তবে আগামী কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতি আর অবনতি হওয়ার শঙ্কা নেই।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মোকাবেলা করছে সিলেটবাসী। নগরী ও জেলার ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। এমন বন্যা মোকাবেলা করতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবেনি এ অঞ্চলের মানুষ। এতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়। বন্যায় অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু-হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ভেসে গেছে বানের পানিতে।

উপদ্রুত এলাকার লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এ অবস্থায় প্রাণে বাঁচা লোকজন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে।

গত ১৫ জুন থেকে ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে পরদিন থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে বন্যার পানি। ভারি বর্ষণ বন্যায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোতে পানি উঠায় সিলেটে সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে সিলেট নগরের মানুষও পানি সংকটে পড়েন।

আর বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। চারদিকে পানিতে থৈ থৈ করলেও খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয় সবখানে।

যদিও সে সময় থেকে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনগুলো ও ব্যক্তি উদ্যোগে বানভাসিদের পাশে দাঁড়ায় খাবার ও পানি নিয়ে।

বন্যায় সিলেটে বন্যাকবলিত হয়ে ৮০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে যায় বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ৯৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ৩৫ হাজার নলকূপের মধ্যে ২৭ হাজার বন্যার পানিতে তলিয়েছে। আর বেসরকারি প্রায় দুই হাজার নলকূপ প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া আটটি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেয়া হয়েছে। একটি প্লান্ট থেকে অন্তত পাঁচ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা যায়। বিশেষ করে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জে ও নগর এলাকায় একটি করে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেয়া হয়েছে। আর দুটি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানি কমলে নলকূপের পানি কিভাবে বিশুদ্ধ করতে হবে, সে পদ্ধতি জানাতে প্রচারণা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সূত্র : ইউএনবি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে সিলেট

আপডেট সময় : ০৮:২২:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২

টানা চার দিন বৃষ্টির পর রোদের দেখা মিলেছে সিলেটে। শনিবার সকাল থেকে আর বৃষ্টি হয়নি সিলেটে। বৃষ্টি থামায় কমতে শুরু করেছে নদ নদীর পানিও। শনিবার সিলেটের সবগুলো নদীরই পানি কমেছে। পানি কমছে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকেও। তবে এখনো নগরের বাইরের বেশিরভাগ এলাকা জলমগ্ন হয়ে আছে। প্রায় ১৭দিন ধরে পানিবন্দি থাকা মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার, কানাইঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসীদ পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ২ সেন্টিমিটার কমেছে। কমেছে, লোভা, সারি ও ধলাই নদীর পানিও।

অনেকদিন পর রোদ উঠায় বাসা পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন নগরের তেররতন এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল আলী। তিনি বলেন, ঘরের ভেতরে প্রায় আট দিন পানি ছিল। ছয় দিন আগে পানি নামলেও বৃষ্টির কারণে ধোয়ামোছা করতে পারিনি। আজ থেকে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছি। পানি নামার পর এখন ঘরের ভেতরসহ আশপাশে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে ঘরেও থাকা যাচ্ছে না।

দোকান থেকে পানি নামলেও এখনো সড়ক তলিয়ে আছে জানিয়ে দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডের ব্যবসায়ী মুকুল আহমদ বলেন, আজ ১৭ দিন হলো পানিবন্দি হয়ে আছি। ব্যবসাপাতি সব চুলোয় গেছে। এভাবে আর কতদিন থাকতে হবে কে জানে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন ছড়া, খালের ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্ন করছে। যেদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা দল সেদিকে গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। পুরো নগরী ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করা হবে বলে জানান তিনি।

পানি ধীরে কমছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, পানি নামার গতি খুবই ধীর। তবে আগামী কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতি আর অবনতি হওয়ার শঙ্কা নেই।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মোকাবেলা করছে সিলেটবাসী। নগরী ও জেলার ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। এমন বন্যা মোকাবেলা করতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবেনি এ অঞ্চলের মানুষ। এতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়। বন্যায় অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু-হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ভেসে গেছে বানের পানিতে।

উপদ্রুত এলাকার লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এ অবস্থায় প্রাণে বাঁচা লোকজন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে।

গত ১৫ জুন থেকে ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে পরদিন থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে বন্যার পানি। ভারি বর্ষণ বন্যায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোতে পানি উঠায় সিলেটে সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে সিলেট নগরের মানুষও পানি সংকটে পড়েন।

আর বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। চারদিকে পানিতে থৈ থৈ করলেও খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয় সবখানে।

যদিও সে সময় থেকে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনগুলো ও ব্যক্তি উদ্যোগে বানভাসিদের পাশে দাঁড়ায় খাবার ও পানি নিয়ে।

বন্যায় সিলেটে বন্যাকবলিত হয়ে ৮০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে যায় বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ৯৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ৩৫ হাজার নলকূপের মধ্যে ২৭ হাজার বন্যার পানিতে তলিয়েছে। আর বেসরকারি প্রায় দুই হাজার নলকূপ প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া আটটি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেয়া হয়েছে। একটি প্লান্ট থেকে অন্তত পাঁচ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা যায়। বিশেষ করে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জে ও নগর এলাকায় একটি করে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেয়া হয়েছে। আর দুটি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানি কমলে নলকূপের পানি কিভাবে বিশুদ্ধ করতে হবে, সে পদ্ধতি জানাতে প্রচারণা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সূত্র : ইউএনবি