ঢাকা ১০:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মাদ্রিদে স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সভা অনুষ্ঠিত স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সাথে নর্থ ইংল্যান্ড জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় বার্সেলোনায় সিক্স এ সাইড ফুটবল টুর্নামেন্টের সমাপনী খেলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত বার্সেলোনায় বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের মিলন মেলা ও নৈশভোজ বার্সেলোনায় ব্যপক আনন্দ-উৎসবে দুর্গাপূজা উদযাপিত সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের মুক্তির দাবীতে স্পেনে প্রতিবাদ সভা কাতালোনিয়া বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত মাদ্রিদে শাহজালাল লতিফিয়া মসজিদের ফলাফল ও পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন কাতালোনিয়া আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শোক দিবস পালিত মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না : জয়

সিলেটে ট্রিপল মার্ডার : সৎ ছেলে ও তার মায়ের বিরুদ্ধে মামলা

জনপ্রিয় অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৬:৪১:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ১০৮৫ বার পড়া হয়েছে

সিলেটে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় সৎ ছেলে আবাদ ও তার মাকে আসামি করে এসএমপির শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহত রুবিয়া বেগমের ভাই আনোয়ার হোসেন। আসামি সুলতানা বেগম রুমি বিয়ানীবাজার থানার আষ্টঘরী গ্রামের আবদাল হোসেনের প্রথম স্ত্রী। আর আবাদ হোসেন (২০) তাদের ছেলে। নিহত রুবিয়া বেগম আবদাল হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী। শনিবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত আবাদকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ।

শাহপরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, শুক্রবার রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলায় আসামি করা হয়েছে নিহত রুবিয়ার সৎ ছেলে আবাদ হোসেন ও তার মা সুলতানা বেগমকে (৪৫)। হত্যা ও হত্যায় প্ররোচণার দুটি ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আবাদকে আটক করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট শহরতলীর খাদিমপাড়া ইউনিয়নের বহর এলাকার মীর মহল্লা গ্রামের ৯ নম্বর বাসায় আবাদ হোসেন তার সৎ মা রুবিয়া বেগম (৩০), বোন জান্নাতুল মাহা (৯) ও ভাই তাহসানকে (৭) দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে আবাদকে আটক করে পুলিশ।

মামলার বাদি আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই-তিন মাস আগে আমার বোন আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল, তার সৎ ছেলে তার সাথে খারাপ আচরণ করে। তার এই কাজে সতিন সুলতানা বেগম রুমি প্ররোচনা দিত। চার মাস আগে আবাদ তার বাবাকে দোকানের কাজে সহযোগিতার জন্য সিলেটে আসে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সে বাসায় ফেরে।

তিনি আরো বলেন, রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় আমার বোন রুবিয়া বেগম, ভাগনি জান্নাতুল মাহা ও ভাগনে তাহসানকে ছুরিকাঘাত ও খুন্তি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন বাসায় আসেন। এরই মধ্যে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে বিছনায় আগুন ধরিয়ে দেয় আবাদ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে হাসাপতালে পাঠায়। হাসপাতালে নেয়ার পর আমার বোন ও ভাগনি মাহাকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভাগনে তাহসানেরও মৃত্যু হয়।

আনোয়ার হোসেন জানান, তার বোন সিলেটে স্বামীর সাথে বসবাস করে- এটা চায়নি তার সতিন। বিয়ানীবাজারে গিয়ে বসবাস করতে সবসময় চাপ দিয়ে আসছিল। নিরুপায় হয়ে রুবিয়া বেগম বিয়ানীবাজার থাকার জন্য গিয়েছিল। কিন্তু, সতিনের যন্ত্রণায় আবার চলে আসে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার অষ্টগ্রামের আবদাল হোসেন বুলবুলের (৪৮) দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী ছেলে আবাদ হোসেন ও এক মেয়েকে নিয়ে বিয়ানীবাজার গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী রুবিয়া বেগম এক মেয়ে এক ছেলে নিয়ে বিআইডিসি মীরমহল্লায় স্বামীর সাথে বসবাস করেন। প্রায় ১০ বছর আগে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ি ইউনিয়নের হাটগ্রামের ফরমান আলীর মেয়ে রুবিয়া বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আবদাল হোসেন বুলবুল। শহরতলীর বিআইডিসি এলাকায় তিনি দীর্ঘ দিন থেকে মুদি দোকান দিয়ে আসছেন। এর মধ্যে প্রথমপক্ষের ছেলে আবাদ হোসেন কয়েক মাস আগে বিয়ানীবাজার থেকে সিলেটে এসে বাবার ব্যবসায় সাহায্য করছে। বৃহস্পতিবার রাতে আবদাল হোসেন বুলবুল দোকানে ছিলেন। রাত পৌনে ১২টা থেকে ১২টার দিকে সৎ মা-ভাই-বোনকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায় ও ছুরিকাঘাত করে আবাদ হোসেন। এতে ঘটনাস্থলেই মা-মেয়ে মারা যান। শিশু তাহসিনকে মুমূর্ষু অবস্থায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

ধৃত আবাদ হোসেন প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, পারিবারিক কলহের জের এবং সৎ মায়ের প্রতি ক্ষোভ থেকেই সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে, তার বক্তব্য আরো যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানান থানার ওসি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সিলেটে ট্রিপল মার্ডার : সৎ ছেলে ও তার মায়ের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট সময় : ০৬:৪১:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

সিলেটে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় সৎ ছেলে আবাদ ও তার মাকে আসামি করে এসএমপির শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহত রুবিয়া বেগমের ভাই আনোয়ার হোসেন। আসামি সুলতানা বেগম রুমি বিয়ানীবাজার থানার আষ্টঘরী গ্রামের আবদাল হোসেনের প্রথম স্ত্রী। আর আবাদ হোসেন (২০) তাদের ছেলে। নিহত রুবিয়া বেগম আবদাল হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী। শনিবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত আবাদকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ।

শাহপরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, শুক্রবার রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলায় আসামি করা হয়েছে নিহত রুবিয়ার সৎ ছেলে আবাদ হোসেন ও তার মা সুলতানা বেগমকে (৪৫)। হত্যা ও হত্যায় প্ররোচণার দুটি ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আবাদকে আটক করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট শহরতলীর খাদিমপাড়া ইউনিয়নের বহর এলাকার মীর মহল্লা গ্রামের ৯ নম্বর বাসায় আবাদ হোসেন তার সৎ মা রুবিয়া বেগম (৩০), বোন জান্নাতুল মাহা (৯) ও ভাই তাহসানকে (৭) দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে আবাদকে আটক করে পুলিশ।

মামলার বাদি আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই-তিন মাস আগে আমার বোন আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল, তার সৎ ছেলে তার সাথে খারাপ আচরণ করে। তার এই কাজে সতিন সুলতানা বেগম রুমি প্ররোচনা দিত। চার মাস আগে আবাদ তার বাবাকে দোকানের কাজে সহযোগিতার জন্য সিলেটে আসে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সে বাসায় ফেরে।

তিনি আরো বলেন, রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় আমার বোন রুবিয়া বেগম, ভাগনি জান্নাতুল মাহা ও ভাগনে তাহসানকে ছুরিকাঘাত ও খুন্তি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন বাসায় আসেন। এরই মধ্যে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে বিছনায় আগুন ধরিয়ে দেয় আবাদ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে হাসাপতালে পাঠায়। হাসপাতালে নেয়ার পর আমার বোন ও ভাগনি মাহাকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভাগনে তাহসানেরও মৃত্যু হয়।

আনোয়ার হোসেন জানান, তার বোন সিলেটে স্বামীর সাথে বসবাস করে- এটা চায়নি তার সতিন। বিয়ানীবাজারে গিয়ে বসবাস করতে সবসময় চাপ দিয়ে আসছিল। নিরুপায় হয়ে রুবিয়া বেগম বিয়ানীবাজার থাকার জন্য গিয়েছিল। কিন্তু, সতিনের যন্ত্রণায় আবার চলে আসে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার অষ্টগ্রামের আবদাল হোসেন বুলবুলের (৪৮) দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী ছেলে আবাদ হোসেন ও এক মেয়েকে নিয়ে বিয়ানীবাজার গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী রুবিয়া বেগম এক মেয়ে এক ছেলে নিয়ে বিআইডিসি মীরমহল্লায় স্বামীর সাথে বসবাস করেন। প্রায় ১০ বছর আগে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ি ইউনিয়নের হাটগ্রামের ফরমান আলীর মেয়ে রুবিয়া বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আবদাল হোসেন বুলবুল। শহরতলীর বিআইডিসি এলাকায় তিনি দীর্ঘ দিন থেকে মুদি দোকান দিয়ে আসছেন। এর মধ্যে প্রথমপক্ষের ছেলে আবাদ হোসেন কয়েক মাস আগে বিয়ানীবাজার থেকে সিলেটে এসে বাবার ব্যবসায় সাহায্য করছে। বৃহস্পতিবার রাতে আবদাল হোসেন বুলবুল দোকানে ছিলেন। রাত পৌনে ১২টা থেকে ১২টার দিকে সৎ মা-ভাই-বোনকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায় ও ছুরিকাঘাত করে আবাদ হোসেন। এতে ঘটনাস্থলেই মা-মেয়ে মারা যান। শিশু তাহসিনকে মুমূর্ষু অবস্থায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

ধৃত আবাদ হোসেন প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, পারিবারিক কলহের জের এবং সৎ মায়ের প্রতি ক্ষোভ থেকেই সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে, তার বক্তব্য আরো যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানান থানার ওসি।