ঢাকা ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

সিলেটের পৌর মেয়র আরিফ, তোপের মুখে নেই কার্যকর পদক্ষেপ

জনপ্রিয় অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৪:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুন ২০২১ ৬২৪ বার পড়া হয়েছে

অ’ভিযানে নেমে বার বার হা’মলা কিংবা তোপের মুখে পড়ছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। হকার, রিকশা শ্রমিক, পরিবহণ শ্রমিক কিংবা মৎস্য ব্যবসায়ী কেউ ছাড় দিচ্ছেন না নগরপিতাকে। এমন অবস্থায় সিসিক মেয়রের শক্ত পদক্ষেপের অভাবকেই দায়ী করছেন সচেতন মহল। আর সিসিক মেয়র প্রশাসনের সহযোগিতার অভাবকে দোষ দিচ্ছেন। তবে কোন একটি ঘটনার পরপর নড়েচড়ে বসলেও পরে ভোটের রাজনীতির কারণে নীরবতায় মেয়রকে বারবার লা’ঞ্ছিত হতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য সচেতন মহলের।

সর্বপ্রথম ২০১৮ সালের ৪ জুন হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে তোপের মুখে পড়েন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পরে নগর ভবনেও হা’মলা চালান ভাসমান হকাররা। সে সময় মেয়র আরিফুল জানান, ‘ফুটপাতে না বসতে হকারদের অনুরোধ জানালে হকার্স লীগ নেতা আব্দুর রকিবের নেতৃত্বে হকাররা সংঘবদ্ধ হয়ে নগর ভবনে হা’মলা চালায়। পরে সিসিকের কর্মক’র্তা-কর্মচারীরা মিলে তাদের প্রতিহত করে।’ কিন্তু এ ঘটনার পরপর মেয়র নড়েচড়ে বসলেও পরে অ’জ্ঞাত কারণেই নীরব হয়ে যান। অথচ এ ঘটনায় কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হলে আর এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না বলে মন্তব্য সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর।

সময়ে সময়ে মেয়রের মতই এ ঘটনা ভুলে যান নগরবাসীও। হকার্সদের হা’মলা ভুলতে না ভুলতে ফের তোপের মুখে পড়তে হয় আরিফুল হক চৌধুরীকে। ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর লাল বাজারে সড়কের পাশ দখলমুক্ত করতে অ’ভিযানে গেলে ঘটে বিপত্তি। সে সময় ‘মাছ চু’রির’ অ’পবাদ দিয়ে মৎস্য ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাতের আঁধারে মেয়র নিজেই এর র’হস্য উন্মোচন করেন। যার মাছ চু’রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারই একটি স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ভাই’রাল হয়। ভিডিওতে ওই মৎস্য ব্যবসায়ী এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি বলে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে স্বীকারোক্তি দেন। কিন্তু জাতির কাছে ভুল বার্তায় ‘চো’র’ বনে যাওয়া মেয়র ভিডিও মাধ্যমে নিজের ইজ্জত রক্ষা করার চেষ্টা করলেও এ বিষয়ে আর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

কিন্তু যে ঘটনাটি নগরবাসীকে হতবাক করেছে সেটি ঘটে চৌহাট্টার অ’বৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সড়কের পাশ দখলমুক্ত করতে অ’বৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড দখলমুক্ত করতে গেলে পরিবহণ শ্রমিকদের হা’মলার শিকার হন মেয়র নিজেই।

এ সময় পরিবহণ শ্রমিক ও সিসিক কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক সং’ঘর্ষ হয়। মুহূর্তেই ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক সময় চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাট’কেল নিক্ষেপ। ভাংচুর হয় বেশ কয়েকটি গাড়ি। পু’লিশসহ আ’হত হন অন্তত ৩০ জন। আর অগ্নেয়াস্ত্রসহ আ’ট’ক হন একজন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় সিসিকের পক্ষ থেকে একটি মা’মলা দায়ের করা হয়। আর ঘটনার পরপর নগর ভবনে মেয়রের আহ্বানে নাগরিক সভা করা হয়। এসময় নাগরিকরা যে কোন মূল্যে অ’বৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের তাগিদ দেন। কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস সময় চলে গেলেও এখনো দখলমুক্ত হয়নি সড়কের পাশ। বরং বেপরোয়াভাবেই চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কের পাশে এলোমেলো করে রাখা হচ্ছে গাড়ি। সংকোচিত হচ্ছে সড়ক। আর লেগে থাকছে যানজট। কিন্তু অ’জ্ঞাত কারণে এখন সিসিক কর্তৃপক্ষও যেন নীরব। মা’মলার আ’সামি ধরতেও ব্যর্থ প্রশাসন। এমনকি সিসিকের করা মা’মলায় এখনো চার্জশিটও দিতে পারেনি পু’লিশ।

এ ব্যাপারে পরিবহণ শ্রমিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘মেয়র শ্রমিকদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এমনকি ক্ষতিপূরণ দিবেন বলেও আশ্বা’স দিয়েছেন।’

যদিও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি মেয়র হিসেবে একা কি করতে পারি। আমি তো পাহারা দিতে পারি না। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। সেই সাথে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে।’

অ’পরদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পু’লিশের অ’তিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেছেন, ‘প্রশাসন আন্তরিক। আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলছে। করো’নাকালীন সময়েও এই জায়গাটা ফাঁকা ছিলো। এখন হয়ত আবার তারা গাড়ি পার্ক করছে। কিন্তু আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিবো যাতে কেউ কোনরকম অ’বৈধ স্ট্যান্ড বা পার্কিং না করতে পারে যে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে।’

এদিকে চৌহাট্টার সং’ঘর্ষের রেশ কাটতে না কাটতেই সরাসরি নগর ভবনে হা’মলা চালিয়েছেন ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা। সম্প্রতি নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অ’ভিযানে নামে সিসিক। এ অ’ভিযানের প্রতিবাদে বুধবার (২ জুন) দুপুরে ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা বি’ক্ষোভ করে নগর ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে সিসিকের নিরাপত্তা কর্মীরা বাঁ’ধা দেন। তাতে সৃষ্টি হয় সং’ঘর্ষ। উভ’য়পক্ষের মাঝে ইটপাট’কেল নিক্ষেপ চলে বেশ কিছু সময়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় নগর ভবনের দামি দামি গাড়ি। এসময় অন্তত ১০ জন আ’হত হন। ঘটনার পর বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেট জে’লার নেতা বাসদ বাসদ সমন্বয়ক কম’রেড আবু জাফর, বাসদ নেতা প্রণব জ্যোতি পাল ও জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী সুমনের নামোল্লেখ ও আরও অন্তত ৩০০ জনকে আ’সামি করে মা’মলা করেছে নগর কর্তৃপক্ষ।

সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স কর্মক’র্তা মোহাম্ম’দ আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে বুধবার রাতে ১২টার দিকে সিলেট কোতোয়ালী থা’নায় মা’মলা’টি দায়ের করেন।

অ’পরদিকে সিসিকের এ মা’মলা ‘মিথ্যা’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেট। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেট জে’লার এক জরুরি সভা থেকে এ দাবি জানানো হয়।

কিন্তু বার বার হা’মলা হলেও অ’জ্ঞাত কারণে মেয়র আরিফুল হক হয়ে যান নীরব। এমনকি পূর্বের কোন ঘটনায় সক্রিয় থাকতেও দেখা যায়নি। মা’মলা ছাড়া নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। বরং সং’ঘর্ষের পর সফলভাবেই চলে দুষ্কৃতিকারীদের কার্যক্রম। সে হিসেবে সিসিক মেয়রের দায়সারা কার্যক্রমকেই দায়ী করছেন নাগরিক সমাজ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মেয়র হলেন নগরবাসীর প্রতিনিধি। তিনি কাজ করবেন জনস্বার্থে। তাই উনার প্রতিটি কাজে জনগণের সম’র্থন থাকে। কিন্তু বারবার হা’মলার শিকার হন। উনার উপর হা’মলা মানে পুরো নগরবাসীর উপর হা’মলা। তবে এসব হা’মলার পেছনে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং মেয়রের নীরবতা দায়ী। মেয়র মহোদয় ঘটনা ঘটার পরপর যেরকম প্রতিক্রিয়া দেখান কিছু দিন পর নীরব হয়ে যান। কিন্তু কোন একটি ঘটনায় যদি শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হত তাহলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। সে ক্ষেত্রে জনগণ উনার সাথে থাকতো। কিন্তু উনি পরবর্তীতে নিজেই নীরব হয়ে যান আর তাই বার বার হা’মলার শিকার হন।’

তবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নিজের নীরবতা বা উদাসীনতাকে অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কাজ করি জনগণের স্বার্থে। আর কাজ করতে গিয়েই হা’মলার শিকার হই। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সহযোগিতা না থাকলে আমা’র কি করার থাকে। প্রতিটি ঘটনার পর মা’মলা করা হয়। কিন্তু দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখা যায় না। তাই আমি বলব প্রশাসন যেন আন্তরিক হন।’

প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক উল্লেখ করে সিলেট মেট্রোপলিটন পু’লিশের অ’তিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, ‘প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক। সকল মা’মলায় প্রশাসনের আন্তরিক চেষ্টা আছে। নানা কারণে হয়তো অ’তীতের মা’মলাগুলোতে চার্জশিট দেওয়া হয়নি বা কোন আ’সামি গ্রে’প্তার হয়নি। তবে আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছি যাতে দ্রুত দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়। আর এখন যে মা’মলা করা হয়েছে এটির ব্যাপারে প্রশাসনিক তৎপরতা আছে। শিগগির আ’সামি গ্রে’প্তার হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সিলেটের পৌর মেয়র আরিফ, তোপের মুখে নেই কার্যকর পদক্ষেপ

আপডেট সময় : ০৭:৪৪:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুন ২০২১

অ’ভিযানে নেমে বার বার হা’মলা কিংবা তোপের মুখে পড়ছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। হকার, রিকশা শ্রমিক, পরিবহণ শ্রমিক কিংবা মৎস্য ব্যবসায়ী কেউ ছাড় দিচ্ছেন না নগরপিতাকে। এমন অবস্থায় সিসিক মেয়রের শক্ত পদক্ষেপের অভাবকেই দায়ী করছেন সচেতন মহল। আর সিসিক মেয়র প্রশাসনের সহযোগিতার অভাবকে দোষ দিচ্ছেন। তবে কোন একটি ঘটনার পরপর নড়েচড়ে বসলেও পরে ভোটের রাজনীতির কারণে নীরবতায় মেয়রকে বারবার লা’ঞ্ছিত হতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য সচেতন মহলের।

সর্বপ্রথম ২০১৮ সালের ৪ জুন হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে তোপের মুখে পড়েন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পরে নগর ভবনেও হা’মলা চালান ভাসমান হকাররা। সে সময় মেয়র আরিফুল জানান, ‘ফুটপাতে না বসতে হকারদের অনুরোধ জানালে হকার্স লীগ নেতা আব্দুর রকিবের নেতৃত্বে হকাররা সংঘবদ্ধ হয়ে নগর ভবনে হা’মলা চালায়। পরে সিসিকের কর্মক’র্তা-কর্মচারীরা মিলে তাদের প্রতিহত করে।’ কিন্তু এ ঘটনার পরপর মেয়র নড়েচড়ে বসলেও পরে অ’জ্ঞাত কারণেই নীরব হয়ে যান। অথচ এ ঘটনায় কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হলে আর এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না বলে মন্তব্য সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর।

সময়ে সময়ে মেয়রের মতই এ ঘটনা ভুলে যান নগরবাসীও। হকার্সদের হা’মলা ভুলতে না ভুলতে ফের তোপের মুখে পড়তে হয় আরিফুল হক চৌধুরীকে। ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর লাল বাজারে সড়কের পাশ দখলমুক্ত করতে অ’ভিযানে গেলে ঘটে বিপত্তি। সে সময় ‘মাছ চু’রির’ অ’পবাদ দিয়ে মৎস্য ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাতের আঁধারে মেয়র নিজেই এর র’হস্য উন্মোচন করেন। যার মাছ চু’রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারই একটি স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ভাই’রাল হয়। ভিডিওতে ওই মৎস্য ব্যবসায়ী এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি বলে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে স্বীকারোক্তি দেন। কিন্তু জাতির কাছে ভুল বার্তায় ‘চো’র’ বনে যাওয়া মেয়র ভিডিও মাধ্যমে নিজের ইজ্জত রক্ষা করার চেষ্টা করলেও এ বিষয়ে আর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

কিন্তু যে ঘটনাটি নগরবাসীকে হতবাক করেছে সেটি ঘটে চৌহাট্টার অ’বৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সড়কের পাশ দখলমুক্ত করতে অ’বৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড দখলমুক্ত করতে গেলে পরিবহণ শ্রমিকদের হা’মলার শিকার হন মেয়র নিজেই।

এ সময় পরিবহণ শ্রমিক ও সিসিক কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক সং’ঘর্ষ হয়। মুহূর্তেই ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক সময় চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাট’কেল নিক্ষেপ। ভাংচুর হয় বেশ কয়েকটি গাড়ি। পু’লিশসহ আ’হত হন অন্তত ৩০ জন। আর অগ্নেয়াস্ত্রসহ আ’ট’ক হন একজন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় সিসিকের পক্ষ থেকে একটি মা’মলা দায়ের করা হয়। আর ঘটনার পরপর নগর ভবনে মেয়রের আহ্বানে নাগরিক সভা করা হয়। এসময় নাগরিকরা যে কোন মূল্যে অ’বৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের তাগিদ দেন। কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস সময় চলে গেলেও এখনো দখলমুক্ত হয়নি সড়কের পাশ। বরং বেপরোয়াভাবেই চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কের পাশে এলোমেলো করে রাখা হচ্ছে গাড়ি। সংকোচিত হচ্ছে সড়ক। আর লেগে থাকছে যানজট। কিন্তু অ’জ্ঞাত কারণে এখন সিসিক কর্তৃপক্ষও যেন নীরব। মা’মলার আ’সামি ধরতেও ব্যর্থ প্রশাসন। এমনকি সিসিকের করা মা’মলায় এখনো চার্জশিটও দিতে পারেনি পু’লিশ।

এ ব্যাপারে পরিবহণ শ্রমিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘মেয়র শ্রমিকদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এমনকি ক্ষতিপূরণ দিবেন বলেও আশ্বা’স দিয়েছেন।’

যদিও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি মেয়র হিসেবে একা কি করতে পারি। আমি তো পাহারা দিতে পারি না। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। সেই সাথে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে।’

অ’পরদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পু’লিশের অ’তিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেছেন, ‘প্রশাসন আন্তরিক। আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলছে। করো’নাকালীন সময়েও এই জায়গাটা ফাঁকা ছিলো। এখন হয়ত আবার তারা গাড়ি পার্ক করছে। কিন্তু আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিবো যাতে কেউ কোনরকম অ’বৈধ স্ট্যান্ড বা পার্কিং না করতে পারে যে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে।’

এদিকে চৌহাট্টার সং’ঘর্ষের রেশ কাটতে না কাটতেই সরাসরি নগর ভবনে হা’মলা চালিয়েছেন ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা। সম্প্রতি নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অ’ভিযানে নামে সিসিক। এ অ’ভিযানের প্রতিবাদে বুধবার (২ জুন) দুপুরে ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা বি’ক্ষোভ করে নগর ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে সিসিকের নিরাপত্তা কর্মীরা বাঁ’ধা দেন। তাতে সৃষ্টি হয় সং’ঘর্ষ। উভ’য়পক্ষের মাঝে ইটপাট’কেল নিক্ষেপ চলে বেশ কিছু সময়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় নগর ভবনের দামি দামি গাড়ি। এসময় অন্তত ১০ জন আ’হত হন। ঘটনার পর বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেট জে’লার নেতা বাসদ বাসদ সমন্বয়ক কম’রেড আবু জাফর, বাসদ নেতা প্রণব জ্যোতি পাল ও জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী সুমনের নামোল্লেখ ও আরও অন্তত ৩০০ জনকে আ’সামি করে মা’মলা করেছে নগর কর্তৃপক্ষ।

সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স কর্মক’র্তা মোহাম্ম’দ আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে বুধবার রাতে ১২টার দিকে সিলেট কোতোয়ালী থা’নায় মা’মলা’টি দায়ের করেন।

অ’পরদিকে সিসিকের এ মা’মলা ‘মিথ্যা’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেট। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেট জে’লার এক জরুরি সভা থেকে এ দাবি জানানো হয়।

কিন্তু বার বার হা’মলা হলেও অ’জ্ঞাত কারণে মেয়র আরিফুল হক হয়ে যান নীরব। এমনকি পূর্বের কোন ঘটনায় সক্রিয় থাকতেও দেখা যায়নি। মা’মলা ছাড়া নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। বরং সং’ঘর্ষের পর সফলভাবেই চলে দুষ্কৃতিকারীদের কার্যক্রম। সে হিসেবে সিসিক মেয়রের দায়সারা কার্যক্রমকেই দায়ী করছেন নাগরিক সমাজ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মেয়র হলেন নগরবাসীর প্রতিনিধি। তিনি কাজ করবেন জনস্বার্থে। তাই উনার প্রতিটি কাজে জনগণের সম’র্থন থাকে। কিন্তু বারবার হা’মলার শিকার হন। উনার উপর হা’মলা মানে পুরো নগরবাসীর উপর হা’মলা। তবে এসব হা’মলার পেছনে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং মেয়রের নীরবতা দায়ী। মেয়র মহোদয় ঘটনা ঘটার পরপর যেরকম প্রতিক্রিয়া দেখান কিছু দিন পর নীরব হয়ে যান। কিন্তু কোন একটি ঘটনায় যদি শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হত তাহলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। সে ক্ষেত্রে জনগণ উনার সাথে থাকতো। কিন্তু উনি পরবর্তীতে নিজেই নীরব হয়ে যান আর তাই বার বার হা’মলার শিকার হন।’

তবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নিজের নীরবতা বা উদাসীনতাকে অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কাজ করি জনগণের স্বার্থে। আর কাজ করতে গিয়েই হা’মলার শিকার হই। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সহযোগিতা না থাকলে আমা’র কি করার থাকে। প্রতিটি ঘটনার পর মা’মলা করা হয়। কিন্তু দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখা যায় না। তাই আমি বলব প্রশাসন যেন আন্তরিক হন।’

প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক উল্লেখ করে সিলেট মেট্রোপলিটন পু’লিশের অ’তিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, ‘প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক। সকল মা’মলায় প্রশাসনের আন্তরিক চেষ্টা আছে। নানা কারণে হয়তো অ’তীতের মা’মলাগুলোতে চার্জশিট দেওয়া হয়নি বা কোন আ’সামি গ্রে’প্তার হয়নি। তবে আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছি যাতে দ্রুত দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়। আর এখন যে মা’মলা করা হয়েছে এটির ব্যাপারে প্রশাসনিক তৎপরতা আছে। শিগগির আ’সামি গ্রে’প্তার হবে।’