রাষ্ট্রদূতের ইউনিভার্সিটি দে স্যান্টিয়াগো দে কোম্পোস্টেলা’তে দাপ্তরিক সফর
- আপডেট সময় : ০৪:০৩:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুন ২০২১ ৭১৮ বার পড়া হয়েছে
স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ গত ২ জুন ২০২১ একটি দাপ্তরিক সফরে ইউনিভার্সিটি দে স্যান্টিয়াগো দে কোম্পোস্টেলা’তে সফর করেন। উক্ত সফরে তিনি ইউনিভার্সিটি দে স্যান্টিয়াগো দে কোম্পোস্টেলা’র উদ্যোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনি “দেয আনোস এন ঢাকা”র উদ্ভোধনে অংশগ্রহন করেন এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে বাংলাদেশ দূতাবাস মাদ্রিদের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এর সাথে স্পেনের ইউনিভার্সিটি দে স্যান্টিয়াগো দে কোম্পোস্টেলা এবং দ্যা ইউনিভার্সিটি অফ করুনা’ এর মেলবন্ধনে “দ্যা ইউনিভার্সিটি দে স্যান্টিয়াগো দে কোম্পোস্টেলা চেয়ার অফ স্প্যানিশ ল্যাঙ্গুয়েজ আন্ড কালচার” প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই উদ্যোগটি বৃহত্তর স্প্যানিশ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স এর পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত ইউনিভার্সিটি দে স্যান্টিয়াগো দে কোম্পোস্টেলা, দ্যা ইউনিভার্সিটি অফ করুনা এবং বৃহত্তর স্প্যানিশ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স এর কর্নধারদের এই মহতী আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত “দ্যা ইউনিভার্সিটি দে স্যান্টিয়াগো দে কোম্পোস্টেলা চেয়ার অফ স্প্যানশ ল্যাঙ্গিয়েজ আন্ড কালচার” এর গত দশ বছরের সক্রিয় কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৯৭২ সালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকেই বাংলাদেশ এবং স্পেন সমআদর্শ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একটি বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে তার সময়কালে আরও জোরদার হবে। তিনি বাংলাদেশের তুলনামূলক বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ, সাশ্রয়ী শ্রম মূল্য, ট্যাক্স অবকাশ, বন্দর সুবিধা এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে নতুন ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এর কথা আমন্ত্রিত শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি স্প্যানিশ স্বনামধন্য রিটেইল প্রতিষ্ঠান ইন্ডাটেক্স সহ অন্যান্য স্প্যানিশ কোম্পানিকে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এর সম্ভাবনা অন্বেষণের আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি শক্তি, জাহাজ নির্মান, গৃহায়ন, শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, টেলিযোগাযোগ, আইসিটি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে স্প্যানিশ বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে উপস্থিত সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গের সামনে ২০২১ সালের ডিসেম্বর অবধি অনুষ্ঠিতব্য জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশত বার্ষিকি উদযাপন, “মুজিব বর্ষ” এবং একই বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বর্ণজয়ন্তী উদাযাপনের কথা তুলে ধরেন। তিনি এই বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধির হার ৫% উল্লেখ করে বাংলাদেশের জনগনের অদম্য সাহস এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন ২০২১, ভিশন ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এর উপরে আলোকপাত করেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত জানান, শান্তিপ্রিয় দেশ বাংলাদেশ, জাতিসংঘের অন্যতম বৃহত্তম শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণকারী দেশ এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সম্প্রীতির জোরালো এবং সক্রিয় কণ্ঠস্বর, যেমনটা ছিল শান্তির অগ্রদুত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক আদর্শ। একই সাথে তিনি উপস্থিত সকলকে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লক্ষ নাগরিক, যারা সাধারণত “রোহিঙ্গা” নামে পরিচিত, তাদের চলমান পরিস্থিতি উদ্ধৃত করেন। এবং বাংলাদেশে তাদের মানবিক কারনে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল ব্যয় এর কথা উল্লেখ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ সঙ্কটের সমাধান কল্পে রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে মায়ানমার এর উপর চাপ বৃদ্ধি করবে।
রাষ্ট্রদূত আগামী দিনগুলোতে দুইদেশের বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক আরও জোরদার হবার প্রসঙ্গে আশাবাদ ব্যক্ত করে তার বক্তব্য শেষ করেন।
উক্ত আয়োজনে “ইউনিভার্সিডাদ ডি সান্টিয়াগো দে কমপোস্টেলা” এর রেক্টর, ডাঃ অ্যান্টোনিও লোপেজ ডিয়াজ, “ইউনিভার্সিডে দা করুনা” এর রেক্টর, ডাঃ জুলিও ই আবালদে আলোনসো, ইন্ডিটেক্স চেয়ারের পরিচালক, অধ্যাপক সান্টিয়াগো ফার্নান্দেজ, করুণা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক কাউন্সিলর এবং স্প্যানিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সামাজিক কাউন্সিলের সম্মেলন এর সভাপতি মিঃ আন্তোনিও অ্যাব্রিল আবাদিন এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশিষ্ট জনেরা উপস্থিত ছিলেন।