মাদ্রিদে উৎসবমুখর পরিবেশে দূর্গা পূজা উদযাপিত
- আপডেট সময় : ০৩:৩০:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ৪৫০ বার পড়া হয়েছে
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে পালিত হলো বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গা পূজা। বাঙালি অধ্যুষিত লাভাপিয়েসে নির্মীত অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পাঁচ দিনব্যাপী এই দুর্গোৎসব মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) শেষ হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এ ধর্মীয় উৎসবে বাংলাদেশি ছাড়াও নেপাল ও ভারতের পশ্চিম বাংলার অনেক প্রবাসীও অংশ নিয়েছেন। এবার দুর্গা পূজা উপলক্ষে মাদ্রিদের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা লাভা পিয়েসের পাশে খেসুস ই মারিয়া রোডস্থ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন হলরুমে পূজা মণ্ডপ তৈরি করা হয়। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এ পূজা মণ্ডপ আরাধনার পাশাপাশি ছিল মিলনমেলার ক্ষেত্রও। ঢাক ঢোল ও শঙ্খ বাজিয়ে চলছে উলুধ্বনি। দুর্গাপূজাকে ঘিরে মাদ্রিদে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা যেন পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে আয়োজিত এই পূজার সমস্ত তিথি নির্ঘণ্ট মেনে এই পূজা পালন করা হয়। অন্যান্যবারের মতো এবারও ছিল নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব বয়সের মানুষই সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন এই অনুষ্ঠানে। আর এই অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন এখানকার বয়োজ্যেষ্ঠরা। পূজাকে ঘিরে বিরাট আয়োজন হলেও কোথাও যেন একটা ঘরোয়া ছোঁয়া থাকে। আয়োজন করা হয় ভোগেরও। হাসিমুখে গোটা আয়োজনের দায়িত্ব ভাগ করে নেন সকলে। এরই সঙ্গে প্রাণখোলা আড্ডায় মেতে ওঠেন সবাই। দেশ থেকে অনেক দূরে সারাটা বছর জুড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা থাকেন নানা কাজের ব্যস্ততা। শুধুমাত্র এই সময়টাতেই একসঙ্গে মেতে ওঠেন এখানকার বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সব কাজ ভুলে সবাই মেতে ওঠেন আনন্দে। তারপর ফিরে যাওয়া আবার সেই দৈনন্দিন জীবনে। স্পেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আসেন এই পূজাতে। মাদ্রিদ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চক্রবর্তী উৎসবমুখর পরিবেশে প্রবাসে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করতে পেরে খুবই উৎফুল্ল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এসময় তারা বলেন, “দেশের মতো আনন্দঘন পরিবেশ না থাকলেও এখানে আমরা নিজেদের মধ্যেই এ উৎসবকে ভাগাভাগি করে নিই।” সোমবার (২৩ অক্টোবর)সন্ধ্যা ৭ টায় পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ।পরিদর্শনকালে তিনি সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।”
তিনি প্রধানমন্ত্রীর উক্তি “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যা পৃথিবীর খুব কমই আছে। আবহমান কাল থেকে বাংলার মুসলমান হিন্দু সম্প্রদায় এক বৃন্তে দুটি ফুলের মতো যে নজির স্থাপন করে চলেছে।দেশে বর্তমানে কিছু দুষ্ট চক্র সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানোর পাঁয়তারা করছে। আমাদের সকলকে সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব মোহতাসিমুল ইসলাম। সর্বজনীন দুর্গাপূজা পরিষদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় বাংলাদেশ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি আল মামুন, সাবেক সভাপতি এস আর আই এস রবিন সহ রাজনৈতিক , সামাজিক , কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এবং সাংবাদিক প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন । স্পেনে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত শ্রী দিনেশ কে পাঠনায়েন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন হলরুমে বড় সর্বজনীন দুর্গাপূজা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, দশমীই মূলত দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ। তবে দেবী দুর্গার বিদায় অর্থাৎ স্বামী গৃহে গমনের পাঁচ দিন পরেই লক্ষ্মীপূজার মধ্য দিয়ে আবার পিতৃগৃহে ফিরে আসবেন। মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি যেমন কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য।ভারতের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই সুন্দর পূজা আয়োজনের প্রশংসা করেন। এ সময় সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চক্রবর্তী, উপদেষ্টা উত্তম মিত্র, মান্না চক্রবর্তী, শ্যামল তালুকদার, গৌরিক প্রভাত চক্রবর্তী, শ্যামল দেব নাথ, শংকর রায়, তাপস দেব নাথ, পলাশ শাহা ,সুব্রত মল্লিক ,শান্তনু দাস, আদ্রি সেন, মোহন লাল মজুমদার , সুমন রায় ,শিমুল ঘোষ, চমন দাস, দিলিপ সূত্রধর, উত্তম ভূইয়া, লক্ষণ মন্ডল, কমল মন্ডল , প্রাণধন চক্রবর্তী ,শংকর পোদ্দার, আরিন্দ্রজিত চক্রবর্তী ,রাখাল দেব উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়।