ঢাকা ০৮:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহান মে দিবস

জনপ্রিয় অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৯:২৮:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১ ১০৫১ বার পড়া হয়েছে

মেহনতি মানুষের বিজয়ের দিন, আনন্দ ও সংহতি প্রকাশের দিন মহান মে দিবস আজ। ১৮৮৬ সালের এই দিনে শিকাগোর হে মার্কেট দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মসময় ও ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদেরই বিজয় হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত শ্রমিকদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রতিবছর দিবসটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে সারা দুনিয়ার মেহনতি মানুষ বিশেষ মর্যাদায় দিবসটি পালন করে আসছে। বাংলাদেশেও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে দিবসটি পালন করে থাকে।

মে দিবসের শতাধিক বছরের ইতিহাসে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে অনেক আলোচনা, দেনদরবার হয়েছে, শ্রমিক আন্দোলন অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে। উন্নত অনেক দেশেই আজ শ্রমিক স্বার্থের বিষয়টি যথেষ্ট সুরক্ষা পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে আইএলও কনভেনশনসহ শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে স্বীকৃত অনেক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের মতো অনেক স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশেই শ্রমিকদের অধিকার এখনো ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত। কয়েকটি পেশা ছাড়া বাকি পেশার শ্রমিকরা এখনো কোনো হিসাবেই আসে না। এর মধ্যে আছে কৃষি, মাছ ধরা, নির্মাণশিল্প, কুটিরশিল্প, গ্রামগঞ্জে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ছোটখাটো কারখানা, দোকান, ইটভাটা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে না আছে নিয়োগপত্র, না আছে কর্মঘণ্টা, না আছে উপযুক্ত মজুরি।

আজ মে দিবস এসেছে এমন এক সময়ে, যখন করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী একের পর এক কর্মহীন হয়ে পড়ছে মানুষ। বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যাঁরা দৈনিক মজুরি বা কর্মঘণ্টার ভিত্তিতে বিভিন্ন কাজ করেন, তাঁরাও রয়েছেন ঝুঁকিতে। একটি জরিপের ফল বলছে, মহামারি করোনার প্রকোপে ২০২০ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে করোনায় ৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী কাজ হারিয়েছেন। কভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশের পোশাক খাতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, যা এই খাতের মোট শ্রমিকের ১৩.৯৫ শতাংশ। জরিপে আরো জানা গেছে, ২০ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিক ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে কাজ হারিয়েছেন। প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ৫ শতাংশ বিভিন্ন কারণে দেশে ফিরে এসেছেন। আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, জাতীয় পর্যায়ে এখনো ৭.৮৮ শতাংশ মজুরি শ্রমিক কাজ হারানোর পর এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। এর মধ্যে শহরাঞ্চলের শ্রমিকের অনুপাত ৮.৮৬ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭.৩৯ শতাংশ।

আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার মেহনতি মানুষের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে শ্রমিকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরিতে আন্তরিক হবে। করোনার এই ক্রান্তিকালে সরকার, শিল্পমালিকসহ সবাইকে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আন্তরিক হতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তাদের করোনার  টিকা প্রাপ্তি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মহান মে দিবস

আপডেট সময় : ০৯:২৮:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১

মেহনতি মানুষের বিজয়ের দিন, আনন্দ ও সংহতি প্রকাশের দিন মহান মে দিবস আজ। ১৮৮৬ সালের এই দিনে শিকাগোর হে মার্কেট দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মসময় ও ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদেরই বিজয় হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত শ্রমিকদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রতিবছর দিবসটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে সারা দুনিয়ার মেহনতি মানুষ বিশেষ মর্যাদায় দিবসটি পালন করে আসছে। বাংলাদেশেও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে দিবসটি পালন করে থাকে।

মে দিবসের শতাধিক বছরের ইতিহাসে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে অনেক আলোচনা, দেনদরবার হয়েছে, শ্রমিক আন্দোলন অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে। উন্নত অনেক দেশেই আজ শ্রমিক স্বার্থের বিষয়টি যথেষ্ট সুরক্ষা পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে আইএলও কনভেনশনসহ শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে স্বীকৃত অনেক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের মতো অনেক স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশেই শ্রমিকদের অধিকার এখনো ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত। কয়েকটি পেশা ছাড়া বাকি পেশার শ্রমিকরা এখনো কোনো হিসাবেই আসে না। এর মধ্যে আছে কৃষি, মাছ ধরা, নির্মাণশিল্প, কুটিরশিল্প, গ্রামগঞ্জে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ছোটখাটো কারখানা, দোকান, ইটভাটা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে না আছে নিয়োগপত্র, না আছে কর্মঘণ্টা, না আছে উপযুক্ত মজুরি।

আজ মে দিবস এসেছে এমন এক সময়ে, যখন করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী একের পর এক কর্মহীন হয়ে পড়ছে মানুষ। বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যাঁরা দৈনিক মজুরি বা কর্মঘণ্টার ভিত্তিতে বিভিন্ন কাজ করেন, তাঁরাও রয়েছেন ঝুঁকিতে। একটি জরিপের ফল বলছে, মহামারি করোনার প্রকোপে ২০২০ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে করোনায় ৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী কাজ হারিয়েছেন। কভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশের পোশাক খাতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, যা এই খাতের মোট শ্রমিকের ১৩.৯৫ শতাংশ। জরিপে আরো জানা গেছে, ২০ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিক ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে কাজ হারিয়েছেন। প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ৫ শতাংশ বিভিন্ন কারণে দেশে ফিরে এসেছেন। আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, জাতীয় পর্যায়ে এখনো ৭.৮৮ শতাংশ মজুরি শ্রমিক কাজ হারানোর পর এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। এর মধ্যে শহরাঞ্চলের শ্রমিকের অনুপাত ৮.৮৬ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭.৩৯ শতাংশ।

আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার মেহনতি মানুষের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে শ্রমিকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরিতে আন্তরিক হবে। করোনার এই ক্রান্তিকালে সরকার, শিল্পমালিকসহ সবাইকে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আন্তরিক হতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তাদের করোনার  টিকা প্রাপ্তি।