বীর মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা হচ্ছে না

- আপডেট সময় : ০৪:৫১:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ ২০২১ ৯২৮ বার পড়া হয়েছে
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে সারাদেশে উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু করে সরকার। এরপর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে ইচ্ছুক প্রায় দেড় লাখ ব্যক্তির আবেদন ৫০৫টি উপজেলা ও মহানগরে যাচাই-বাছাই করা হয়। একইভাবে যাচাই-বাছাই করা হয় স্বীকৃতি পাওয়া গেজেটভুক্ত আরও সাড়ে ৩৬ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধাকেও। তবুও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেও হচ্ছে না বীর মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা।
কয়েক বছর ধরে ২৬ মার্চ বা ১৬ ডিসেম্বর সামনে রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে চলেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সবশেষ চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ঘোষণা দেন, এ বছরের ২৬ মার্চের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হচ্ছে না। তবে মন্ত্রীর ঘোষণা ঠিক রাখতে ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আংশিক একটি খসড়া তালিকা মন্ত্রণালয় ও জামুকার ওয়েবসাইটে প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। মন্ত্রীর অনুমোদন পেলে ২৬ মার্চ তা প্রকাশ করা হবে। অবশ্য এই আংশিক তালিকা প্রকাশ নিয়েও জটিলতা রয়েছে, কারণ ভাতাপ্রাপ্ত প্রায় ৩৬ হাজার ৬৮৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত প্রতিবেদন এখনও মন্ত্রণালয়ে এসে জমা হয়নি। চলতি বছরের গত ৩০ জানুয়ারি ও ৬ ফেব্রুয়ারি দেশের ৪৯২টি উপজেলা ও ১৩টি মহানগরে তাদের যাচাই-বাছাই করা হয়।
এরমধ্যে মাত্র ৩২৫টি উপজেলা ও মহানগর কমিটি এ পর্যন্ত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদন দেয়নি এখনও ১৮০টি উপজেলা ও মহানগর কমিটি। প্রায় ২৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহালের সুপারিশ করা হয়েছে বিভিন্ন কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে। আবার ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে যাদের স্বীকৃতি বহালের সুপারিশ করা হয়নি, তাদের আপিল করার সুযোগ দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জামুকা। আগামী ১ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তারা আপিল করতে পারবেন। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রাখলে বা তালিকা থেকে বাদ দিলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এসব কারণে মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা হচ্ছে না এবারও। একইভাবে ২০১৭ সাল থেকে যে দেড় লাখ ব্যক্তির আবেদন যাচাই-বাছাই শুরু করা হয়েছে, সেই কার্যক্রমও এখন শেষ হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, খসড়া পাবেন। আমরা চেষ্টা করছি।’ তবে এ বিষয়ে তিনি আর কিছু বলতে চাননি।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২ অনুযায়ী কোনো মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থীর তথ্যসংবলিত আবেদন প্রথমে নিজ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে যাচাই হয়। উপজেলা কমিটির সুপারিশে প্রাথমিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হলে ওই তালিকা জামুকায় পাঠানো হয়। জামুকার সভায় তদন্ত ও অনুমোদনের পর সংশ্নিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাকে গেজেটভুক্ত করে মন্ত্রণালয়।
কিন্তু ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্ত করা হয়েছে, যার সংখ্যা ৩৬ হাজার ৬৮৭ জন। তাদের চলতি বছরের গত ৩০ জানুয়ারি ও ৬ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাই করা হয়। এছাড়া ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের আবেদন নেয় মন্ত্রণালয়। সেখানে এক লাখ ৩৬ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়ে। এর বাইরে সরাসরি প্রায় ১০ হাজার আবেদন বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ ব্যক্তির আবেদন আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৫০৫টি কমিটি গঠন করে জামুকা।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, দেশে এখন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৮। মোট ভাতাভোগী খেতাবপ্রাপ্ত শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাসহ দুই লাখ ৬ হাজার। তাদের মধ্যে সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধা এক লাখ ৯২ হাজার। তবে তাদের মধ্যে গত বছরের মার্চে চালু হওয়া মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল ‘ডাটাবেসে’ এখনও পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হয়েছেন এক লাখ ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা।
সুত্র, দৈনিক সমকাল ।