সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই একটা সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এটা রাজনীতির শৈলী ও সৌন্দর্য বটে। রাজনীতি কূটচালের প্রাধান্য থাকবে, আন্তঃদলের সাথে দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা ও ভোটযুদ্ধে পরস্পর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু নীতি ও মতের পার্থক্য সত্ত্বেও পরস্পরের মধ্যে শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা পোষণের শিষ্টাচারের অনেক দৃষ্টান্তই দেখা যায়। নীতির কারণে ভিন্ন দলের সাথে বৈরিতা ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান কোথাও কোথাও হলেও রাজনীতির অঙ্গনের প্রকৃত আদর্শ স্থাপনকারীরা নিজ মত পোষণ এবং বাস্তব জীবনের নিজের বিশ্বাস ও আদর্শের প্রতি অটল থাকা, তার প্রচার ও অনুশীলন করা সত্ত্বেও আর ভিন্ন দলের আদর্শের প্রতি অনাস্থার পরও তাকে অশ্রদ্ধা অকারণ নিন্দা পরিহার করে থাকেন। অপরকে তার মতের ওপর আস্থায় রাখার জন্য, নিন্দা না করে তার ভিন্ন মত পোষণের অধিকারকে স্বীকার করে অপূর্ব সহিষ্ণুতা দেখান। তারা বিরুদ্ধবাদীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার নীতিতেই বিশ্বাসী।
এর ফলে সেখানে রাজনীতিতে সঙ্ঘাত সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়। এই পথ অনুসরণ করলে রাজনীতি হয়ে ওঠে ‘বুদ্ধির যুদ্ধ’। সে যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের শ্রেষ্ঠত্ব এভাবেই প্রতিষ্ঠা করে থাকেন। এমন পথ থেকে বিচ্যুতি ঘটলে রাজনৈতিক দলগুলো একসময় হয়ে উঠবে মাসলম্যানদের ক্লাব। দলের আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে শক্তি ও সংঘর্ষ সঙ্ঘাত। জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা যে রাজনীতির প্রধান দর্শন তা আর বজায় থাকবে না। শুরু হয়ে যাবে শক্তির প্রদর্শনী, যার অনিবার্য ফল হবে জীবনক্ষয়ের বিষয়। দীর্ঘ দিনের অনুশীলন ও চর্চার ফলেই আজকে ক্ষমতার হাতবদল ঘটছে জনমতের প্রাধান্যে। না হলে ফিরে যেতে হতো অতীতের সেই জংলি শাসনে। পথ পরিহার করায় বিশ্বের শান্তি সংহতি প্রতিষ্ঠা হয়েছে বটে। তবে পৃথিবীর সর্বত্র এমন অর্জন সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশেই ক্ষমতার হাতবদলের প্রক্রিয়া আজো এমন মসৃণ হয়ে উঠেনি। সেখানে গণতন্ত্রের ব্যাখ্যাও সার্বজনীন নয়। আরো পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের পথ এখনো এমন মসৃণ তো নয়ই বরং এত বেশি কণ্টকাকীর্ণ যে, নিয়তই এখানে ঘটছে সংঘর্ষ, সঙ্ঘাত ও প্রাণহানি।